বয়স অনুযায়ী শিশুর বিকাশ

বয়স অনুযায়ী শিশুর বিকাশ

Information তথ্য বাংলা

শিশুকে পারস্পারিক ক্রিয়ামূলক যত্ন তার বয়স অনুযায়ী দিতে হবে। শিশুর বয়সের উপর তার গ্রহন করার ক্ষমতা নির্ভর। জন্মের পর থেকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিশু ক্রমান্বয়ে সহজ থেকে জটিল ব্যাপারগুলাে বুঝতে পারে ও গ্রহন করতে পারে। কাজেই শিশুর নির্দিষ্ট বয়সের গ্রহন ক্ষমতা অনুযায়ী পারস্পরিক ক্রিয়ামূলক যত্ন দিলে সেটা শিশু সহজেই গ্রহণ করতে পাৱবে এবং তা মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশে সহায়তা করবে।

শিশুর বয়স অনুযায়ী পারস্পরিক ক্রিয়ামূলক যত্নের (প্রারম্ভিক উদ্দীপনা ও প্রারম্ভিক শিক্ষা) নিয়ে আলোচনা করা হলােঃ

গর্ভাবস্থায় (শিশু যথন প্রণবস্থায়)ঃ

  • মায়ের জন্য উপযুক্ত খাদ্য, বিশ্রাম এবং আনন্দদায়ক পরিবেশের ব্যবস্থা করা।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানাে এবং নিরাপদ প্রসব অথবা জরুরী প্রসূতি সেবার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া।
  • মা-কে গৃহস্থালী কাজকর্মে সাহায্য করা এবং ভারী কাজ থেকে বিরত রাখা।
  • মায়ের চাহিদা এবং মতামত কে তার দেওয়া এবং মনােযােগ দেওয়া।
  • ছেলে বা মেয়ে যা ই ৬জন নিক না কেন, তাকেই সাদরে গ্রহন করা হবে এই বলে মা-কে আশ্বস্ত করা
  • নারী নির্যাতন বন্ধ করা।

জন্ম থেকে ৬ মাসঃ

  • জন্মের আধা ঘন্টার মধেই শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান করানাে শুরু করা এবং শিশুকে মায়ের দেহের সঙ্গে ও জড়িয়ে ধরা
  • বারবার শিশুর দেহে হাত বুলানাে, আদর সােহাগ করা এবং সর্বদা হালকাভাবে শিশুকে ধরা- ক্লান্ত বা বিচলিত হলেও
  • শিশুকে মৃদুস্বরে গুন গুন করে গান/কবিতা/ছড়া শােনানাে, মুখ ঢেকে টুকি’ বা লুকোচুরি খেলা করা
  • শিশুর হাত পা নেড়ে হালকা ব্যায়াম করানাের সময় তার সাথে আনন্দসূচক শব্দ করে কথা বলা
  • রঙ্গীন খেলনা তার সামনে ধরা বা ঝুলন্ত কোনাে খেলনা শিশুর নাগালের মধ্যে ঝুলিয়ে রাখা যা তার দৃষ্টি শক্তি এবং কানে শােনার শক্তি গঠনে সাহায্য করবে
  • শিশুকে একটি পরিচ্ছন্ন, সমতল এবং নিরাপদ স্থানে শুইয়ে দিন যাতে সে মুক্তভাবে নড়াচড়া করতে পারে এবং কোনো বস্তু ধরতে পারে
  • শিশুকে কোনাে কিছু ধরিয়ে দিয়ে অথবা তাকে ধরে আপনি এমনভাবে রাখুন যেন নিকটবর্তী স্থানে কি ঘটছে তা দেখতে পারে।

৬ মাস- ২ বৎসরঃ

  • শিশুকে নিয়মিতভাবে পরিমিত খাবার খেতে দিন এবং খাবার খেতে উৎসাহিত করুন, তবে জোর জবরদস্তি করবার প্রয়ােজন নেই
  • প্রতিদিন ব্যবহৃত বস্তুগুলির নাম বলুন এবং শিশুকে নাম ধরে ডাকুন
  • শিশুর সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করুন, তাকে উৎসাহ দিন এবং তাকে তার কাজে সাঙ্গ দিন।
  • শিশুকে সাথে নিয়ে পরিবারের সকলে এক সাথে বসে খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং খাবার সময়ে পরিবারে সবাই শিশুদের সঙ্গে কথাবার্তা বলুন।
  • শিশুকে কোনো কিছু ধরে দাড়াতে বা হাটতে সাহায্য করুন, তার হাত ধরে হাটান এবং তার সঙ্গে খেলাধুলা করুন।
  • শিশুকে অাশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে জানানাের জন্য পরিচিত জিনিসগুলোর নাম বলুন এবং সেগুলাে দেখতে বলুন
  • শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি। গ্রীগতিতে হলে বা তার দৈহিক কোনো অক্ষমতা হলে বাড়তি উত্মীগন নি এবং কথাবার্তা বলুন
  • শিশুকে চামুচ/কাপ সহযোগে খাবার খাওয়ার জন্য সাহায্য করুন।
  • শিশুর সঙ্গে পড়াশুনা, গান গাওয়া বা খেলাধূলা করুন
  • শিশুকে বিপদজনক বস্তুসমুহ পরিহার কতে বলুন।
  • শিশুর সঙ্গে স্বাভাবিক ভাষায় কথা বলুন। শিশুদের মত করে বলবেন না
  • শিশুকে সাধারণ নিয়মকানুন শিক্ষা দিন এবং তার কাছ থেকে দায়িত্ববান ফলাফলের আশা ব্যক্ত করুন ।
  • শিশুর কৃতিত্বের প্রশংসা করুন।

প্রয়োজনবোধে ডাক্তার/স্বাস্থ্যকর্মী বা কোনো সহায়তা কেন্দ্রের পরামর্শ নিন যদি শিশু………….

(ক). কথার প্রত্যুত্তরে কোনাে শব্দ না করে

(খ). চলন্ত বস্তুর দিকে নজর না দেয়

(গ). প্রাণহীনভাবে মা-বাবা ৰা কোনো ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে থাকে বা কোনো কাজে সাড়া না দেয় অথবা

অন্যের প্রতি আকর্ষণ বােধ না করে

(ঘ). ক্ষুধা না থাকে বা খাদ্যের প্রতি কোনাে আগ্রহ না থাকে

(ঙ). হাটা-চলার সময় যদি ভারসাম্য না রাখতে পারে

(চ). শিশু যদি অন্যের যত্নে লালিত পালিত হয়ে থাকে তবে সে নিজেকে আহত করে বা অস্বাভাবিক আচরণ করে

২ বৎসর – ৫ বৎসর

  • শিশুর পছন্দের গান, ছড়া, কবিতা তার কাছ থেকে শুনুন।
  • শিশুকে সাথে নিয়ে বই পড়ুন, নাটক/সিনেমা/ছবি দেখুন এবং সেগুলোর মাধ্যমে শিশুকে ভাষা শেখাতে সাহায্য করুন।
  • দাঁত মাজা, হাত ধােয়া, পােষাক পরা এবং পায়খানা প্রশ্রাব করার পর সাবান বা ছাই দিয়ে হাত ধােয়ার অভ্যাস গড়তে শিশুকে সাহায্য করুন
  • শিশুকে বড়দের সাথে কীভাবে আচরণ করতে হয় তা শেখান যেমন, সালাম বা আদাব দেয়া, মেহমান আসলে বসতে বলা এবং তা পালন করতে উৎসাহিত করুন
  • শিশুর নিজেকে প্রকাশ করার সুযােগ করে দিন। যেমনঃ ছবি আঁকা, এবং মাটিতে বা কাগজ ও পুরােনাে কাপড় দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরী করা
  • শিশুর কথা বলতে যদি কোনাে অসুবিধা হয় তবে ধীরে ধীরে তার সংশােধন করুন
  • শিশুর যদি তােতলামি থাকে তবে তাকে ধীরে ধীরে কথা বলতে সাহায্য করুন
  • শিশুকে তার পছন্দ মত সময় অনুযায়ী খাবার খেতে উৎসাহিত করুন
  • শিশুকে নিজে নিজে খেলতে এবং অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে উৎসাহ দিন

প্রয়ােজনবােধে স্বাস্থ্যকর্মী বা কোনাে সহায়তা কেন্দ্রে1র পরামর্শ নিন যদি শিশু……..

(ক). খেলাধূলা না করে

(খ). হাঁটতে গেলে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে বা বার বার পড়ে যায়

(গ). ছােট ছােট বস্তু চিনতে না পারে

(ঘ). সহজ কথাবার্তা বুঝতে না পারে

(ঙ). কয়েকটি শব্দের কথাবার্তা না বলতে পারে

(চ). খাবার খেতে কম বা কোনাে আকর্ষন না থাকে

(ঘ). ভয়কাতুরে, ত্রুদ্ধ বা হিংস্র (মানসিক বিপর্যয়ের চিহ্ন) ব্যবহার করে।

শিশুর জন্য নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশেঃ

শিশুকে নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশে পারস্পরিক ক্রিয়ামূলক যত্ব দিতে হবে । নীচে নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশের কিছু উদাহরন দেয়া হলোঃ

  • গর্ভবতী মা-কে আদর যত্ন করে খাওয়ানো, তার সাথে ভাল ব্যবহার করা
  • শিশুকে ধমক না দিয়ে কোনাে বিষয় বুঝিয়ে বলা
  • খেলার জন্য পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা রাখা
  • শিশুর কাজে সমর্থন ও সহযােগিতা করা এবং তার কজের জন্য প্রশংসা করা
  • শিশুর সামনে ক্রোধান্বিত হয়ে জোরে কথা না বলা বা ঝগড়া বিবাদ না করা
  • ক্ষতিকারক বস্তুসমূহ শিশুর নাগালের বাইরে রাখা
  • বাড়িতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
  • দুর্ঘটনা বা ইনজুরি প্রতিরােধের জন্য বাড়ীর ভিতর ও আশপাশ নিরাপদ করা।

একটি শিশু সে ছেলে বা মেয়ে যা-ই হােক না কেন সে শিশুই এবং উভয়ের মধ্যেই সমানভাবে একই ধরনের বিকশিত হবার সম্ভাবনাগুলাে রয়েছে। কাজেই সেই শিশুটিকে পরিপূর্ণভাবে গড়ে তােলার জন্য একইভাবে পারস্পরিক ক্রিয়ামূলক যত্ব দিতে হবে।

শিশু-বিকাশের জন্য শিশুর ক্ষতিকর যেসব আচার-আচরণ ও অভ্যাস পরিহার করা উচিৎঃ

• মাকে কন্যা সন্তান জন্মদানের জন্য দোষারােপ করা

• শিশুর সম্মুখে ধূমপান করা বা অন্যান্য বদ অভ্যাস

• শিশুর সম্মুখে বিবাদে লিপ্ত হওয়া অথবা পারিবারিক সদস্যদের নিজেদের মধ্যে খারাপ ভাষা ব্যবহার করা

• শিশুর আগ্রহ / সামর্থ্য বহির্ভূত কোনাে কিছু করার জন্য শিশুকে চাপ প্রয়ােগ করা

• শিশুকে বিদ্রুপ করা, ভর্ৎসনা করা এবং প্রহার করা

• অন্য ব্যক্তির সম্মুখে শিশুর দুর্বলতা / অসফলতা নিয়ে সমালােচনা করা

• শিশুর সাফল্যের জন্য প্রশংসা না করা।

• শিশুর মনে অহেতুক বা অপ্রয়ােজনীয় কোনাে বিষয় সম্বন্ধে ভয় সঞ্চার করা

• শিশুর সম্মুখে মিথ্যাচার করা এবং অন্যকে মিথ্যা আশা দেওয়া

• শিশুর নাগালের মধ্যে বিপদজনক দ্রব্যাদি যথা ওষুধ, ছুরি, কাঁচি, কীটনাশক ইত্যাদি রাখা

• শিশুকে একাকী ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে (আগুনের কাছে, ডােবা, গর্ত, নদী, রাস্তা ইত্যাদি) রাখা যা দ্বারা তার যে কোনাে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, যেমন- পুড়ে যাওয়া, পানিতে ডুবা ইত্যাদি।