বর্তমানে জাতীয়তাবাদ একটি অতি পরিচিত শব্দ। রাজনৈতিক পরিবর্তন আনয়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদ একটি সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। তবে বিংশ শতাব্দীর জাতীয়তাবাদ হলো, উগ্র জাতীয়তাবাদ। পূর্বে ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রের উদ্ভবের পিছনে জাতীয়তাবাদ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ফলে বিভিন্ন জাতির মধ্যে সংঘটিত হয়েছে যুদ্ধ। জাতীয়তাবাদের কারণেই বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব জাতীয়তাবাদের যুগ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

জাতীয়তাবাদঃ জাতীয়তাবাদ একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ। সাধারণভাবে জনগণের নিজস্ব ইচ্ছানুযায়ী জাতীয় জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মানসিক অনুভূতি এবং অনুরাগকে জাতীয়তাবাদ হিসেবে অভিহিত করা যায়। তবে জাতীয়তাবাদের ধারণা অত্যন্ত ব্যাপক।

প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন মনীষী বিভিন্নভাবে জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তাদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা তুলে ধরা হলোঃ

বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কাল টন জে, হায়েস বলেছেন, “Nationalism consists of modern emotional fusion and exaggeration of two very cold phenomena nationality and patriotism.” অর্থাৎ, জাতীয়তাবাদ হচ্ছে। জাতীয়তা ও দেশপ্রেম এ দুটি অনাসক্ত বিষয়ের এক আবেগপূর্ণ সমন্বয় ও অতিরঞ্জিতকরণ।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এল. স্লাইডার বলেছেন, “জাতীয়তাবাদ হচ্ছে ইতিহাসের এক বিশেষ স্তরে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আধ্যাত্মিক চেতনার ফল।”

অধ্যাপক প্যাডেলফোর্ড লিংকন তাঁদের ‘Dynamics of International politics’ গ্রন্থে বলেছেন, “জাতীয়তাবাদ হচ্ছে দুটি উপাদানের সংমিশ্রণ। একটি হচ্ছে জাতীয়তার ধারণা সম্পর্কিত আদর্শ আর অপরটি হচ্ছে জাতীয় রাষ্ট্রের ভিতর সে আদর্শের রাজনৈতিক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ।”

অধ্যাপক অরগানস্কীর মতে, “জাতীয়তা বাদ হলো এক ধরনের অতি শক্তিমান এক অনুভূতি, যা জাতির অবস্থান ও আচার আচরণের ধরনের সাথে কোন ব্যক্তির সনাক্তকরণের পথ রচনা করে।”

অধ্যাপক লাস্কির মতে, “জাতীয়তাবাদ সাধারণভাবে মানসিকতার ব্যাপার,যারা এর অংশীদার এ ঐক্যবোধ তাদেরকে বাকি মানব সমাজ থেকে স্বতন্ত্ররূপে চিহ্নিত করে।”

আরনল্ড জি, টয়নবী বলেছেন, “Nationalism is noting material or mechanical but a subjective psychological telling in living people.” অর্থাৎ, জাতীয়তাবাদ কোনরূপ বস্তুগত বা যান্ত্রিক কিছু নয়, বরং তা জীবন্ত মানুষের এক আত্মিক ও মনস্তাত্ত্বিক অনুভূতি।

উপযুক্ত সংজ্ঞাসমূহ বিশ্লেষণ করলে জাতীয়তাবাদের সঠিক অর্থ ও প্রকৃতি সম্পর্কে যথাযথ ধারণা লাভ করা যায়। জাতীয়তাবাদ হচ্ছে এক অনুভূতি, যার মাধ্যমে জাতীয় মানসিকতা বিকশিত হয়। এটি জনগণকে একতাবদ্ধ রাখার এক বিশেষ উপায় বা পন্থা।

পরিশেষে বলা যায় যে, জাতীয়তাবাদ একটা জাতির কর্ণধার হিসেবে কাজ করে। জাতীয়তাবাদের প্রত্যেকটা বিষয়ই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে জাতীয়তাবাদের স্বরূপ বিনষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি আরাে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। তাই এমন জাতীয়তাবাদ গঠন করতে হবে যা জাতি গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।