জাতীয়তাবাদ গঠনের উপাদানগুলো কী কী

জাতীয়তাবাদ গঠনের উপাদানসমূহ আলোচনা। জাতীয়তাবাদ গঠনের উপাদানগুলো কী কী?

বাংলা তথ্য

বর্তমান বিশ্বে জাতীয়তাবাদ শব্দটির সাথে সবাই কমবেশি পরিচিত। রাজনৈতিক পরিবর্তন ও জনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে জাতীয়তাবাদ সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। তবে বিংশ শতাব্দীতে মানব জাতি যে জাতীয়তাবাদের সম্মুখীন হয়েছে, সেটি হলো উগ্র জাতীয়তাবাদ। অতীতে জাতীয়তাবাদের ধারণা ও আদর্শই ছিল ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রের উদ্ভদের পিছনে ক্রিয়াশীল। আর এর ফলেই বিভিন্ন জাতির মধ্যে সংঘটিত হয়েছে যুদ্ধ। জাতীয়তাবাদের প্রভাবে সমগ্র বিশ্ব বর্তমানে জাতীয়তাবাদের যুগে প্রবেশ করেছে।

জাতীয়তাবাদ গঠনের উপাদানসমূহঃ জাতীয়তাবাদ গঠনের ক্ষেত্রে একাধিক উপাদান কাজ করে থাকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, এসব বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে জাতীয়তাবাদ গঠিত হয়। নিম্নে জাতীয়তাবাদ গঠনের উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলোঃ

. ভৌগোলিক ঐক্যঃ জাতি গঠন করতে হলে একটি জনসমষ্টিকে কোন একটি নির্দিষ্ট ও সংলগ্ন ভূখণ্ডে বসবাস করতে হয়। জাতি গঠনের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও ভৌগোলিক ঐক্যের অভাবে একটি যাযাবর জনসমষ্টি জাতি হিসেবে পরিগণিত হতে পারে না। যেমন- ইহুদিরা প্যালেস্টাইনে আবাসভূমি স্থাপনের আগে বিভিন্ন দেশে বসবাস করেও একটি জাতীয় জনসমাজ বলে পরিগণিত হতো না।

. বংশগত ঐক্যঃ বংশগত ঐক্য ও জাতি গঠনে বিশেষভাবে সহায়ক হয়ে থাকে। এটি মানুষের সাথে এমন এক সুদৃঢ় ঐক্যের ভাব গড়ে তোলে, যা জাতি গঠনে অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। একই বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। রক্তের টানই জনগণের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন ও একাত্মতার অনুভূতিকে জাগ্রত করে তোলে। উদাহরণ হিসেবে আমেরিকায় বহু বংশীয় জনগণের বসবাস সত্ত্বেও তারা একই জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ।

. ধর্মীয় ঐক্যঃ জাতীয় ধারণার সৃষ্টি এবং তা জোরদার করার ক্ষেত্রে এক শক্তিশালী উপাদান হচ্ছে ধর্মীয় ঐক্য। এটা জাতীয়তাবোধ সৃষ্টির এক মহান সূত্র হিসেবে কাজ করে। এটার উপর নির্ভর করে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের বহু জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে। যেমন- ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছিল।

. ভাষা সাহিত্যগত ঐক্যঃ জাতীয়তাবোধ গঠনের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভাষা ও সাহিত্যগত ঐক্য। এর মাধ্যমে যে ভাবের আদান প্রদান হয়, তা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার এক উল্লেখযোগ্য উপায় হিসেবে কাজ করে থাকে। বিভিন্ন ভাষাভাষি জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধ গড়ে উঠতে দেখা যায়। যেমন- ভারত ও সুইজারল্যান্ডের জনগণের মধ্যে ভাষাগত বিভিন্নতার জন্য জাতিগত বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।

. অর্থনৈতিক ঐক্যঃ জনগণকে জাতীয়তাবোধে অনুপ্রাণিত করার অর্থনৈতিক ঐক্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। জনগণের মাঝে অর্থনৈতিক সমতা বিদ্যমান থাকলে তারা একত্রে বসবাস করার জন্য উদ্বুদ্ধ হতে পারে। সকলের অর্থনৈতিক স্বার্থ এক ও অভিন্ন হলে জাতীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় হয়।

. দ্বন্দ্ব কলহের ঐক্যঃ বিভিন্ন সামন্তবাদী ও বংশগত দ্বন্দ্ব কলহের মধ্যে ঐক্য স্থাপনা করা গেলে সে জাতীয় জাতীয়তাবোধ শক্তিশালী থাকে। ইউরোপ তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ত্রিশ বছরের যুদ্ধ ইউরোপে বিভিন্ন জাতীয় রাষ্ট্র গঠনে ও প্রতিষ্ঠার পিছনে প্রেরণাদায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

উপর্যক্ত আলােচনা শেষে বলা যায় যে, জাতীয়তাবোধ একটি জাতির জাতীয় সংহতির নির্ধারক হিসেবে কাজ করে। জাতীয়তাবাদ গঠনের প্রত্যেকটা উপাদানই গুরুত্বপূর্ণ তবে বর্তমানে জাতীয়তাবোধ হিংসাত্মক রূপ ধারণ করেছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ রূপের ভয়াভহতা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই এমন জাতীয়তাবাদ গঠন করতে হবে, যা জাতি গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে এবং জাতির জন্য ইতিবাচক ফল সৃষ্টি করতে পারে।