আমরা খাবার খাই বলে বেঁচে আছি। সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম শরীরের জন্য প্রয়ােজন পুষ্টিকর ও সুষম খাবার । অনেকে মনে করেন শুধুমাত্র দামী খাবারেই পুষ্টি আছে। আসলে তা নয়, সব খাবারেই পুষ্টি আছে। সব রকম খাবার খেলেই খাবার সুষম হয়। শুধু জানা প্রয়ােজন কোন কোন খাবারে সমন্বয় ঘটাতে হবে। সুষ্ঠভাবে এক খাবারের সাথে আরেক খাবার মেশানাের ভেতর রয়েছে পুষ্টি ও সুষম খাবারের রহস্য। আমরা যদি জানতে পারি কোন খাদ্য কী কাজ করে এবং কোন খাদ্যের সাথে কী খাদ্য মেশাতে হবে তাহলেই এই রহস্য ভেদ করা সম্ভব।

খাদ্য কী?…. খাদ্য হচ্ছে কতগুলাে প্রয়ােজনীয় উপাদানের সমষ্টি, যা গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও কর্মতৎপরতা বজায় থাকে, ক্ষয়পূরণ হয়, বিভিন্ন কাজের জন্য শরীরকে শক্তি যােগান দেয় এবং সর্বোপরি শরীরের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

পুষ্টি কী?…. পুষ্টি একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় আমরা খাদ্য খেলে খাদ্য আমাদের শরীরে শক্তি দেয়, শরীরের বৃদ্ধি ঘটায় । শরীর ভাল রাখে ও রােগ প্রতিরােধ করে। খাদ্যের সাথে স্বাস্থ্যের সম্পর্কই হল পুষ্টি অর্থাৎ খাদ্য খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যের যে পরিবর্তন হয় তা খাদ্যের পুষ্টিমানের উপর নির্ভর করে। আমরা যা খেয়ে থাকি সেখান থেকেই শরীর প্রয়ােজনীয় পুষ্টি পেয়ে থাকে । প্রয়ােজনীয় পুষ্টি পেলেই আমরা কাজ করার জন্য শক্তি পাই ।

সুষম খাবারঃ সুষম খাবার হল সেই সমস্ত খাবার যার মধ্যে শরীরের প্রয়ােজনীয় সবকটি খাদ্য-উপাদানই (অর্থাৎ আমিষ, শর্করা, তেল, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি) সঠিক পরিমাণে থাকবে । দৈনন্দিন খাবারের পরিমাণের চেয়ে সংখ্যায় এবং প্রকারে এই সকল খাবার যত বেশী থাকবে, খাবার ততই সুষম হবে। খাদ্যের প্রতিটি উপাদান ও তাদের কাজ সম্পর্কে ভাল করে জানতে পারলে পুষ্টি ও সুষম খাবার সম্পর্কে ভাল বুঝা যাবে ।

খাদ্যের উপাদান বা শ্রেণীবিভাগঃ

খাদ্যে ৬টি উপাদান রয়েছে । যথা : আমিষ, শর্করা, স্নেহ বা তেল, খনিজ লবণ, ভিটামিন ও পানি।

আমিষঃ

আমিষ শরীর গঠনে সাহায্য করে। শরীরের বৃদ্ধি ও ক্ষয় পূরণের জন্য আমিষের প্রয়ােজন । সব রকমের ডাল, বরবটি, শিম, শিমের বীচি, মটরশুটি, শুটকি মাছ, ডিম, দুধ, কলিজা ইত্যাদিতে আমিষ জাতীয় উপাদান বেশী পরিমাণে আছে। চালের মধ্যে ভাল আমিষ আছে । ঢালের আমিষ ডালের আমিষের সাথে মিষে মাছ-মাংসের কাজ করে অর্থাৎ চাল ও ডাল একসাথে খেলে উপকার পাওয়া যায় । ডিমের আমিষ একটি পূর্ণ আমিষ’ । ডিম থেকে যেমন একটি মুরগীর বাচ্চা পূর্ণ শরীর নিয়ে বের হয়ে আসে, ঠিক তেমনি শিশুদেরকে ডিম খাওয়ালে তাদের শরীরও সম্পূর্ণরূপে গঠিত হয়। ডিম পাওয়ার সহজ উপায় হল নিজ নিজ পরিবারে। হাস-মুরগী পালার অভ্যাস করা । পরিমিত পরিমাণ আমিষ পাওয়ার জন্য প্রত্যেক দিন ডাল খাওয়া প্রয়ােজন। তাই পরিমাণে। আমিষ পেতে হলে দামী বড় মাছ না খেয়ে কম খরচে ছােট মাছ বেশী খাওয়া ভাল।

শর্করাঃ

শর্করা জাতীয় খাবার শরীরে শক্তি ও কাজ করার ক্ষমতা যােগায়। চাল, গম, ভুট্টা, যব, গুড়, চিলি, আল, মিষ্টি আল কচ। সুজি, চিড়া, মুড়, খৈ ইত্যাদিতে বেশী পরিমাণে শর্করা জাতীয় উপাদান আছে।

স্নেহ বা তেলঃ

তেল বা চর্বি শরীরে কর্মক্ষমতার উৎস হিসেবে কাজ করে। তেল জাতীয় খাবার শর্করায় পরিবর্তিত হয়ে শরীরে শক্তি দেয় । সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, তিলের তেল, সখীর তেল, ঘি, মাখন, ডালডা, মাছ-মাংসের তেল ইত্যাদিতে, তেল জাতীয় উপাদান বেশী থাকে। তেল থেকে আমারা শক্তি পাই । শক্তি পাই বলেই আমরা কাজ করতে পারি । যদি আমরা বেশী তেল উপাদান বেশী থাকে। তেল থেকে আমরা শক্তি পাই । শক্তি পাই বলেই আমরা কাজ করতে পারি। জাতীয় খাবার খেয়ে ফেলি, তবে তা শরীরে চর্বি আকারে জমা হয়। ছােটদের তা হয় না। শরীরে চর্বি জমা ভাল না। শরীরে। চর্বি জমতে থাকলে খুব খারাপ অসুখ (যেমন-হৃদরােগ) হতে পারে । ঘি, ডালডা, পাম অয়েল, মাখন- এগুলাে ভাল না। এ থেকে হৃদরােগ হতে পারে । তেল হিসাবে সােয়াবিন খুব ভাল । তেল জাতীয় খাবার না খেলে শাক-সজী থেকে ভিটামিন আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। শিশুদের খাবারে প্রত্যেকদিন কিছু পরিমাণ সােয়াবিন তেল মিশিয়ে দিবেন। এর ফলে শিশু তার প্রয়ােজনীয় শক্তি পাবে এবং স্বাস্থ্য ভাল থাকবে । গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী অবস্থায় খাবারের সাথে সয়াবিন তেল। মিশিয়ে নিলে বেশী শক্তি পাওয়া যায়। এ সময় তাদের বেশী শক্তির প্রয়ােজন। সয়াবিন তেল খেলে কোন ক্ষতি হয় না ।

খাদ্যের বিভিন্ন উপাদানের উৎস সমূহ এবং কাজসমূহ খাদ্যে ৬টি উপাদান রয়েছে । যথা : আমিষ, শর্করা, স্নেহ বা তেল, খনিজ লবণ, ভিটামিন ও পানি।

উপাদানের নামউৎসকাজ/অভাবের ফল
আমিষসব রকমের ডাল, বরবটী, শিম, শিমের বীচি, মটরশুটি, শুটকীমাছ, ডিম, দুধ, কলিজা ইত্যাদি।শরীরের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ
শ্বেতসারচাল, গম, যব, ভুট্টা, গুড়, চিনি, আলু, মিষ্টি আলু, কচু, সুজি, চিড়া, খৈ ইত্যাদি।শক্তি বৃদ্ধি
তেল বা চর্বিসয়াবিন তেল, সরিষার তেল, সূর্যমূখীর তেল, ঘি, মাখন, ডালডা, মাছ-মাংসের তেল ইত্যাদি।কর্মক্ষমতার উৎস
ভিটামিন এ-হলুদ ফলমূল, শাক-সজি, মলা ও ঢেলা মাছ, পাকা পেপে, মিষ্টি কুমড়া, গাজর, টমেটো, পাকা আম, কাঁঠাল ইত্যাদি।রাতকানা
ভিটামিনভিটামিন বি- চেঁকি ছাটা চাল, ডাল, অংকুর, ছােলা, শাক-সজি ইত্যাদি।স্নায়ুবিক বিষাদ, মানসিক অস্থিরতা, ঠোট ও জিহ্বার কোনায় ঘা ইত্যাদি
রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বাড়ায়,
ভিটামিন সি- আমলকী, লেবু, পেয়ারা, টমেটো, আমড়া ইত্যাদিত্বক ভাল রাখে, শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয়
ক) লৌহ- গুড়, ডিম, মাছ, লালশাক, কচুশাক, কলিজা, মাংস।রক্ত স্বল্পতা
খনিজ লবণখ) ক্যালসিয়াম- গুড়, দুধ, ডিম, দৈ, কাঁটাসহ ছােট মাছ, কচুশাক, লালশাকহাড় ঠিকমত গঠিত হয় না
গ) আয়ােডিন- সামুদ্রিক মাছ, পেঁয়াজ, রসুন।গলগন্ড বা ঘ্যাগ