আমরা আসলে নিজের জন্য সময় ব্যয় করিনা, নিজের সাথে আত্মিক সম্পর্ক গঠন ও উন্নয়নের গুরুত্ব অনুধাবন করিনা। আমাদের যে সমস্ত দক্ষতা, পারদর্শিতা ও নিজেকে বোঝার ক্ষমতা আছে তা খুজে বের করার চেষ্টাও করি না। দরকার শুধু একটু নিজের মাঝে গভীর ভাবে মনোনিবেশ করা, নিজেকে একটু সময় দিয়ে মানসিক শক্তিগুলো খুঁজে বের করতে হবে। জীবনের কোনো না কোনো সময়ে আমাদের সকলেরই কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বের করে আনতে মানসিক শক্তির খুব প্রয়োজন। এই মানসিক শক্তি আমাদের প্রত্যেকের মাঝেই লুকায়িত আছে।
যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের মানসিক শক্তি বাড়েনোর জন্য যে, সমস্ত বিষয়গুলো আমাদের সাহায্য করে থাকে, তাহলে জেনে নেওয়া যাকঃ
১। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করাঃ যেকোনো পরিস্থিতিতে অস্থিরতা বা মানসিক চাপ অনুভব করলে আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীরকে শান্ত রাখতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করাটা দরকার।
২। বর্তমানে থাকাঃ সব সময় বর্তমানে থেকে কাজ করার চেষ্টা করা। এতে করে আমাদের দুশ্চিন্তা কম হয়। কারণ- আমরা যদি আমাদের অতীত বা ভবিষ্যত নিয়ে বেশি চিন্তা-ভাবনা করি, সেই ভাবনাগুলো আমাদের বর্তমান সময়টাকে উপভোগ করতে বাধা দেয়। তাই বর্তমানে থাকাটা আমাদের জন্য অনেক বেশি উপকারি।
৩। সময় ব্যবস্থাপনাঃ যার সঠিক ব্যবহারে আমরা আমাদের কাজগুলোকে আমাদের সুবিধে অনুযায়ী সাজাতে পারি। আমাদের পরিবার, অফিসের কাজ, বন্ধু-মহল সব কিছুকে এক সাথে পরিচালনা করতে গিয়ে কোন কাজ কখন করব, কীভাবে করব, আমি করতে পারব কি না এ-সমস্ত ভাবতে ভাবতেই বিভিন্ন মানসিক চাপ, উদ্বিগ্নতা, হতাশা ইত্যাদি তৈরি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আমাদের কাজগুলোকে গুরুত্ব ও আমাদের সুবিধে অনুযায়ী ৪ ভাগে ভাগ করতে পারি। যেমনঃ
(i) জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ
(ii) জরুরি কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ
(ii) গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কম জরুরি কাজ এবং
(iv) গুরুত্বপূর্ণও নয় এবং জরুরিও নয় এমন কাজ
এভাবে কোন কাজকে কতটুকু প্রাধান্য দিয়ে সমাপ্ত করতে হবে, তা ঠিক করেই আমরা আমাদের কাজগুলো করতে পারি। এভাবে কাজ করলে অগোছালো মনে হবে না।

৪। দিনের একটা সময় নিজের জন্য রাখাঃ এই সময়ে আমাদের যা যা পছন্দ আমরা তাই করব। এর মাঝে বই পড়া, বাহিরে বেড়াতে যাওয়া, নিজেকে সাজানো, পছন্দের মানুষের সাথে কথা বলা বা সময় কাটানো, পছন্দের খাবার, সিনেমা দেখা ইত্যাদি।
৫। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সারাদিনের মধ্যে একটা ভালো লাগার মুহূর্ত খুঁজে বের করাঃ আমরা যদি খুব বড় কোনো ভালো লাগার মুহূর্ত খুঁজে না পাই,তাহলে একদম ছোট ছোট কাজগুলো মনে করে ঘুমাতে যেতে পারি। এটা আমাদেরকে পজিটিভ বা ইতিবাচক শক্তি দেয়। যা আরামদায়ক ঘুমে সাহায্য করবে।
৬। প্রকৃতির সাথে সময় কাটানোঃ একটু সময় নিয়ে আকাশ দেখা, বাসায় গাছ থাকলে সেগুলোর পরিচর্যা করা ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা চাইলেই প্রকৃতির সাথে সময় কাটাতে পারি।
৭। ক্ষমা করে দেয়াঃ কেউ কোনো ভুল করেছে তার জন্য সেটা নিয়ে বসে আছি, আমি কখনোই তাকে ক্ষমা করব না, এই চিন্তাভাবনা নিয়ে যতদিন থাকবেন, ততদিন আপনার মনের মধ্যে নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা তৈরি হবে। যা আমাদের ইতিবাচক থাকতে বাধা দেবে। তাই আমরা যত ক্ষমাশীল হবো, আমাদের মন তত সুন্দর ও ইতিবাচক থাকবে।
৮। ধন্যবাদ দেয়ার অভ্যাস তৈরি করাঃ আপনি লক্ষ করে দেখবেন কারো প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পর অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করে। বয়সে আপনার ছোট অথবা বড় যাই হোউক না কেন ধন্যবাদ দেওয়ার অভ্যাস করুন। এটা আমাদের ইতিবাচক শক্তি দিবে।
সর্বপরি, যদি নিজের সব চেষ্টা করার পরও নিজেকে কোনো কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের করে আনতে না পারি, তাহলে অবশ্যই তা নিয়ে বসে না থেকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। কাউন্সেলিং নিলে আমরা আমাদের কাজগুলোকে আরও সহজভাবে করতে পারব। অন্যের প্রয়োজনে কিছু করতে না পারি অন্তত তার পাশে থাকবো। সবাই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হবো।
Psychosocial counselor