অপুষ্টিজনিত রোগসমূহ

অপুষ্টিজনিত রোগসমূহ

বাংলা তথ্য

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শিশু মৃত্যুর ক্ষেত্রে অপুষ্টিজনিত রোগসমূহ সবচেয়ে বেশি অবদানকারী এবং এটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন ঘাটতিজনিত অসুস্থতার দিকে পরিচালিত করে। অপুষ্টি (Malnutrition) শাব্দিক অর্থে শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, বিকাশ ও সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি ও বৃদ্ধি দুটোকে বুঝালেও পুষ্টির ঘাটতিজনিত অবস্থা বুঝাতেই অপুষ্টি শব্দটি সচরাচর ব্যবহৃত হয়। খাদ্যে এক বা একাধিক বিশেষ করে আমিষ উপাদান এর স্তল্পতা অর্থাৎ সুষম খাদ্য এর দীর্ঘ অভাবই অপুষ্টির অন্যতম কারন।

আমাদের দেশে অপুষ্টির কারণে প্রধান (৬) ছ’টি রােগ হয় ? – রােগগুলাে হলঃ

👉 হাড্ডিসার রােগ

👉 গা ফোলা রােগ

👉 রাতকানা রােগ

👉 রক্তস্বল্পতা

👉 জিহ্বা ও ঠোটের কোণায় ঘা

👉 আয়ােডিনের অভাবজনিত সমস্যা

হাড্ডিসার রােগঃ

অনেক দিন ধরে শক্তিদায়ক খাবারের অভাব হলে শিশুর হাড্ডিসার রােগ হয়। সাধারণত এক বছরের বয়সের নীচের শিশুরাই এ রােগে বেশী ভােগে। শিশুর বয়স ৫ মাস পূর্ণ হওয়ার পর থেকেই তাকে মায়ের দুধের সাথে সাথে শক্তিদায়ক খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়ালে তার হাড্ডিসার রােগ হয় না। শক্তিদায়ক খাবারগুলাে হলঃ ভাত, রুটি, আলু, গুড়, চিনি, তেল ইত্যাদি।

হাড্ডিসার রােগের লক্ষণঃ

• বয়সের সাথে সাথে শিশুর শরীর ঠিকমত বাড়ে না

• ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়

• শরীরের মাংশপেশী শুকিয়ে চামড়া ঢিলা হয়ে যায়

• মেজাজ খিটখিটে হয়

• প্রায়ই পাতলা পায়খানা হয়

হাভিড়সার রােগের চিকিৎসাঃ

হাডিড়সার রোগে আক্রান্ত শিশুকে প্রচুর পরিমাণে শক্তিদায়ক ও আমিষ জাতীয় খাবার যেমন ঃ ভাত, রুটি, আলু, গুড়, ডাল, ছােট মাছ বা বড় মাছ, সীমের বীচি, শাক-সজী, মৌসুমী ফল, ডিম, দুধ, মুরগীর মাংস খাওয়াতে হবে । এরােগ শক্তিদায়ক খাবারের অভাবে হয় তাই শিশুির খাবারে রান্নার সময় অবশ্যই তেল দিতে হবে । চাল, ডাল, শাক-সজী, তেল লবণ, পরিমাণমত দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে বারে বারে খাওয়াতে হবে । হাভিড়সার রোগ হলে শিশুর হজমশক্তি কমে যায়, সেজন্য প্রথমে অল্প খাবার বারে বারে খাওয়াতে হবে। পরে শিশু যতটা খেতে পারে সেই পরিমাণ খাবার দিনে ৫ থেকে ৬ বার খাওয়াতে হবে। পরামর্শের জন্য নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগযােগ। করতে হবে ।

গা ফোলা রোগঃ

আমিষ জাতীয় খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে না খাওয়ালে শিশুর গা ফোলা রােগ হয়। সাধারণত ১ থেকে ৩ বছর বয়সের শিগুদের এ রােগ বেশী হয়। শিশুর বয়স ৫মাস পূর্ণ হওয়ার পর থেকেই তাকে মায়ের দুধের সাথে সাথে আমিষ জাতীয় খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়ালে। গা ফোলা রােগ হয় না। আমিষ জাতীয় খাবারগুলাে হল ও ডাল, সীমের বীচি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি।

গা ফোলা রােগের লক্ষণঃ

• শরীরে বা পায়ে পানি আসে

• মাথায় চুল পাতলা ও বাদামী হয়ে যায়

• জিহ্বা ও ঠোটে ঘা হয়

• ক্ষুধা কমে যায় বা খেতে চায় না

• প্রায়ই ডায়রিয়া হয়

• চর্মরােগ দেখা দেয়

গা ফোলা রােগের চিকিৎসাঃ

 গা ফোলা রােগের চিকিৎসায় আমিষ জাতীয় খাবারের প্রয়ােজন বেশী । গা ফোলা রােগ হলে শিশুকে যথেষ্ট পরিমাণ আমিষ জাতীয় খাবার, যেমন ঃ ডাল, সীমের বীচি, মাছ, ডিম, দুধ, সম্ভব হলে মুরগীর মাংস খাওয়াতে হবে । শিশুর খাবার সবসময় তেল দিয়ে রান্না করতে হবে। আলাদা করে লবণ খাওয়ানাে যাবে না ।। গা ফোলা রােগ হলেও শিশুর হজমশক্তি কমে যায়। তাই প্রথম অল্প অল্প খাবার বারে বারে খাওয়াতে হবে । পরে শিশু যতটা খেতে পারে সেই পরিমাণ খাবার দিনে ৫ থেকে ৬ বার খাওয়াতে হবে। প্রয়ােজনে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পরামর্শ নিতে হবে।

রাতকানা রােগঃ

রাতকানা এক ধরণের দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা যা নিক্যালোপিয়া নামেও পরিচিত। রাতকানা রোগে ভুক্তভোগী রোগীরা রাতে বা অস্পষ্ট আলোকিত পরিবেশে দুর্বল দৃষ্টিভঙ্গি অনুভব করে। যদিও “রাতকানা রোগ শব্দটি বোঝায় যে আপনি রাতে দেখতে পাচ্ছেন না, এটি এমন নয়। এই রোগটি বাচ্চা থেকে বুড়ো সব বয়সের মানুষেরই হতে পারে। রাতকানা মানুষরা কিন্তু দিনের বেলায় বা আলোকিত জায়গাতে পুরো সঠিক ভাবে দেখতে পান। এমন মানুষদের শুধু মাত্র রাত্রে বা হঠাৎ যদি অনেক বেশি আলোকিত জায়গা থেকে কম আলোকিত জায়গায় যান তখন তাদের দেখতে অসুবিধা হয়। রাতকানা রোগের সমস্যার কারণে আপনার অন্ধকারে দেখতে বা গাড়ি চালানোতে সমস্যা হতে পারে।

রাতকানা রোগের কারণঃ

রাতকানার প্রধান কারণ “রেটিনাইটিস পিগমেনটোসা” নামক একটি রোগ, যার ফলে রেটিনার রড কোষ ধীরে ধীরে আলোর প্রতি সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এটা একধরনের জেনেটিক/ বংশগত (অনেক সময় দেখা গিয়েছে যে বহু বছর ধরে এই রোগটি বংশগত ভাবে হয়ে এসেছে), রোগ যেখানে রাত্রিকালীন দৃষ্টির পাশাপাশি দিনের বেলা দেখার ক্ষমতাও নষ্ট হতে থাকে। রাত্রিকালীন অন্ধত্বের ফলে জন্ম থেকে রড কোষ জন্মের পর থেকেই কাজ করে না, বা অল্প পরিমাণ কাজ করে, কিন্তু এই অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে।

প্রতিরোধঃ

এই রোগ প্রতিরোধের জন্য ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাদ্য, যেমন: মাছের যকৃতের তেল, কলিজা, সবুজ শাকসবজি, রঙিন ফল (পাকা আম, কলা ইত্যাদি) ও সবজি (মিষ্টি কুমড়া, গাজর ইত্যাদি) এবং মলা-ঢেলা মাছ খেতে হবে।

জিহ্বা ও ঠোটের কোণায় ঘাঃ

মুখে বা ঠোঁটের কোণায় ঘা বেশ যন্ত্রণাদায়ক এক রোগ। বিরক্তিকরতো বটেই।

লক্ষণঃ ঠোঁট লাল হয়ে ফেটে যায়, কোনাগুলি ফেঁটে যায়। মুখের বা ঠোঁটের দুই কোণায় ঘা হয়ে সাদা হয়ে যায়। হা করতে কষ্ট হয়। জিহ্বায় ঘা হয়, লাল হয়ে ফুলে যায় ও ব্যথা হয় এবং খেতে অসুবিধা হয়।

প্রতিকারঃ অনেকেরই জিহ্বা ও ঠোটের কোণায় ঘা হয়ে থাকে। খাদ্যে ভিটামিন ‘বি’ এর অভাব হলে জিহ্বা ও ঠোটের কোণায় ঘা হয় । প্রচুর পরিমাণে চেঁকি ছাটা চাল, ডাল, গম, পুইশাক, কলমিশাক, কালাে কচু শাক, কলিজা, ডিম, কাঁঠাল ইত্যাদি খেলে এ অসুখ ভাল

যে কোন প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন