
দেশের বাইরে বেড়াতে যান কিংবা কাজের সূত্রে যান, নির্দ্বিধায় ঘুরতে সাথে পাসপোর্ট থাকা খুবই জরুরী। পাসপোর্ট এক ধরনের পরিচয়পত্র যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সময় ব্যক্তির জাতীয়তা ও পরিচয় প্রত্যয়িত করে। আমাদের দেশে পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং ঝামেলা-মুক্ত। এর জন্য আপনাকে কেবল অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সমস্ত নথিসমেত নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। তবে পাসপোর্ট পেতে হলে আবেদনকারীর বয়স অবশ্যই ১৮ বছর বা তারও বেশি হতে হবে। ভারতের যেকোনও জায়গা থেকে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যাবে, নিজের পছন্দমতো রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিস (আরপিও) নির্বাচন করা যাবে এবং পছন্দসই পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে নিজেদের আবেদন পত্র জমা দেওয়া যাবে।

পাসপোর্ট তৈরী করতে কি কি ডকুমেন্ট ও কত টাকা প্রয়োজন
পাসপোর্টের আবেদনের জন্য কী কী নথি দরকারঃ
আপনি যদি নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে চান কিংবা পাসপোর্ট রি-ইস্যু করাতে চান তবে, ঠিকানার প্রমাণ হিসাবে আধার কার্ড, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস কানেকশনের প্রুফ, টেলিফোনের (ল্যান্ডলাইন/পোস্টপেইড মোবাইল) বিল, জলের বিল ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। এইসব নথি ছাড়াও সক্রিয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাসবইয়ের কপি এবং ছবি ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া আপনি বিবাহিত হলে এবং আপনার জীবনসঙ্গীর পাসপোর্ট থাকলে সেটির কপিও ব্যবহার করতে পারেন।
পাসপোর্টের আবেদনের জন্য জন্ম তারিখের প্রমাণ প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে আবেদনকারী – জন্ম সার্টিফিকেট (পৌরসভা বা জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধক কর্তৃক প্রদত্ত), স্কুল কর্তৃক প্রদত্ত ট্রান্সফার/ম্যাট্রিক/স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট, প্যান কার্ড, আধার কার্ড/ই-আধার, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার আইডি কার্ড ইত্যাদির যেকোনো একটি তথ্য ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া আবেদনকারীর নামে কোনো লাইফ ইন্স্যুরেন্স পলিসি থাকলে সেটির ডকুমেন্টও জন্ম প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
ভারতে পাসপোর্ট বানাতে খরচ কতঃ
ভারত সরকারের বিদেশমন্ত্রক ভারতীয় নাগরিকদের পাসপোর্টের অনুমোদন দেয়। আগেই বলে রাখি, পাসপোর্টের আবেদনের জন্য যে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি নেওয়া হয়, যা ফেরতযোগ্য নয়। ৩৬ পৃষ্ঠার নতুন পাসপোর্ট পেতে বা পুরোনো পাসপোর্ট রিনিউ-এর আবেদন করতে খরচ পড়বে ১,৫০০ টাকা। এই পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর। এই পাসপোর্টটি হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে কিংবা কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ৩,০০০ টাকা অ্যাপ্লিকেশন ফি দিতে হবে।
আবার ১০ বছর মেয়াদী ৬০ পৃষ্ঠার পাসপোর্টের আবেদনের জন্য ২,০০০ টাকা লাগবে। ৬০ পৃষ্ঠার পাসপোর্টটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে, হারিয়ে বা চুরি হয়ে গেলে ৩,৫০০ টাকা ব্যয় করতে হবে। ১৮ বছরের কম বয়সী অর্থাৎ বাচ্চাদের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে খরচ পড়বে ১,০০০ টাকা। ৩৬ পৃষ্ঠার এই পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ বছর।

অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করার প্রক্রিয়াঃ
১। প্রথমে passportindia.gov.in সাইটে গিয়ে ‘Ordinary Passport’ অপশনটিকে নির্বাচন করতে হবে। অথবা সরাসরি এই লিং (https://portal2.passportindia.gov.in/AppOnlineProject/user/RegistrationBaseAction?request_locale=en)
২। পেজটি খোলার পর অনলাইন ফর্ম জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। তারপর ‘Register Now’ বিকল্পটিতে ক্লিক করতে হবে।
৩। ক্লিক করার পর, এটি একটি পেজ নির্দেশ করবে যেখানে আবেদনকারী সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য পূরণ করতে হবে। তথ্য পূরণ করে রেজিস্টার করা হয়ে গেলে সেই আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ ইন করতে হবে।
৪। লগইন হয়ে গেলে, নতুন পাসপোর্ট লিঙ্কের জন্য আবেদন করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে এর আগে কখনই পাসপোর্ট আবেদন করা হয়নি।
৫। ফর্ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বিবরণ পূরণ করতে হবে এবং তা জমা দেওয়ার জন্য উপরে ক্লিক করতে হবে।
৬। পরবর্তীতে ক্লিক করতে হবে ‘Pay and Schedule Appointment’এ। সেটি ক্লিক করার পর, একটি পেজে নির্দেশিত করা হবে যে কোন মোডের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে হবে, সেটি নির্বাচন করতে। কোনও পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র / পাসপোর্ট অফিসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিংয়ের জন্য অনলাইন পেমেন্ট বাধ্যতামূলক।
৭। ‘Print Application Receipt’-এ ক্লিক করতে হবে এবং পাসপোর্ট অফিসে প্রিন্ট আউটটি নিয়ে যেতে হবে অথবা রেজিস্টার্ড নম্বরটিতে আসা এসএমএসটি দেখাতে হবে যা অ্যাপয়েন্টমেন্টের প্রমাণ হিসাবে গ্রাহ্য হবে।
৮। যাচাই প্রক্রিয়ার জন্য নিজেদের সমস্ত আসল নথি পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে যেতে হবে।

অনলাইনে আবেদন পত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়াঃ
১। হোম পেজে উপলব্ধ ‘ই-ফর্ম ডাউনলোড’ অপশন থেকে ই-ফর্ম ডাউনলোড করতে হবে।
২। প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে এবং ‘Validate and Save’ বোতামে ক্লিক করতে হবে। তারপর একটি এক্সএমএল ফাইল তৈরি হবে যা সিস্টেমে আপলোড করা হবে।
৩। ফাইলটি জেনারেট হয়ে গেলে একইভাবে উপরের পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে হবে। ‘Upload e-form’ অপশনে থাকা এক্সএমএল ফাইল আপলোড করতে হবে এবং পেমেন্ট অপশনে গিয়ে প্রক্রিয়াটিকে যথাযথ ভাবে শেষ করতে হবে।
৪। যাচাই প্রক্রিয়ার জন্য নিজেদের সমস্ত আসল নথি পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে যেতে হবে।